Image-Description
Stories
একটি ছুটির দিন
Jul 24 2023 Posted by : montajpublishing

পেখম আজ বাড়িতে। স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবস, তাই ছুটি। মা বাবা দুজনেই অফিস গেছে। পিসিমণি বন্ধুর বাড়ি। ঠাকুমা নিজের ঘরে  বসে টিভি দেখছে।  পেখমের এখন কোনো কাজ নেই। শুধু একটা রচনা লিখতে হবে। বিষয় হল, একটি ছুটির দিন। ওদের স্কুলের বাংলা ম্যাম লিখতে দিয়েছেন। পেখম ভাবে, আজকে-টাকে নিয়েই লেখা যাক না। কিন্তু কী লিখবে? আজকে বড় এলোমেলো দিন।  না রোদ, না বৃষ্টি। মাঝে মাঝে  মেঘলা হচ্ছে। আবার একটু রোদ, কিন্তু উত্তাপহীন। ছাদে কাপড়জামাগুলো শুকোচ্ছে। মা বলে গেছে, বৃষ্টি এলে কাপড়জামাগুলো তুলে নিতে।  
পেখম পায়ে পায়ে ছাদে গেল। বেশ ভালো লাগছে এখন। ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। ছাদে অনেক কিছু মেলা। মাসির মেয়ে মিন্টি থাকলে কী সুন্দর লুকোচুরি খেলা যেত! ও একা একাই ঘুরে বেড়ায়। হঠাৎ কে যেন ফিসফিসিয়ে ডাকল। 'এই পেখম।' পেখম ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখল, পিসিমনির চুমকী দেওয়া ওড়নাটা। পিসি না থাকলে যেটাকে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ও লম্বা চুল বানায়। ও জিজ্ঞেস করল, 'কী হয়েছে?'
ওড়না বলল, 'তোর মায়ের লাল হাউসকোটটাকে একটু সরতে বলত। অনেকটা জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে জবুথুবু মেরে থাকতে হচ্ছে। আমি তো একটু পরেই শুকিয়ে যাবো। তখন ও যত খুশি জায়গা নিক না।' লাল হাউসকোটটা নিজের ফিতেটাকে আঙুলের মত তুলে বলল, 'এই চুপ। এক্ষুনি যদি শুকিয়ে যাবি তো ছাদে আসার দরকার কী ছিল এত ঘটা করে! বারান্দায় বা জানালায় ঝুললেও তো শুকিয়ে যেতিস!' পেখম কী একটা বলে ওদের ঝগড়া থামাতে যাচ্ছিল; সামনে থেকে ঠাকুমার সাদা শাড়িটা  চেঁচিয়ে উঠল ― 'ইসস...! দিল, দিল আমার সাদা রঙটা নষ্ট করে!' পেখম চমকে দ্যাখে ঠাকুমার শাড়ি আর বাবার নতুন তুঁতে রঙের শার্টটা হাওয়ায় ঝাপটা খেতে খেতে গায়ে গায়ে এসে পড়ছে, তাই ঠাকুমার শাড়ি এত চেঁচাচ্ছে। ঠাকুমার শাড়ি বলল, 'দেখেছিস পেখম তোর বাবার শার্টটা থেকে রঙ  উঠছে। আর আমার গায়ে এসে আমায় রঙ দিয়ে দিচ্ছে।' বাবার শার্টটা একটু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, 'এতে আমার কী দোষ? ও তুঁতে রঙ একটু ওঠেই। পেখমের বাবা আমায় ড্রাই ওয়াশ করালেই পারত। তাহলে আর এত ঝঞ্ঝাট থাকত না।' 
ঠাকুমার শাড়ি অভিমানে ফুলে ফুলে উঠল ― 'আমারই বা কী দোষ! এ রঙ কি আর উঠবে? মাঝখান থেকে আমি বাতিল হয়ে যাবো।' যা পিটপিটানি স্বভাব পেখমের ঠাকুমার। পিসিমণির রুমাল চেঁচিয়ে বলল, 'খবরদার। মালিকপক্ষের নিন্দা কোরো না। তাছাড়া দেখছ না? ওদের মেয়েটা হাঁ করে কেবল আমাদের কথা শুনছে।'
কপ করে হাঁ মুখটা চেপে বন্ধ করে নেয় পেখম। বাবার মোজাটা চেঁচিয়ে বলে, 'পেখম আমাকে একটু রোদের দিকে মেলে দাও না। ছায়ায় থাকলে আমি শুকোবো না, আর আমার সর্দি লেগে যাবে।' পেখম ওর দিকে এগোচ্ছিল। আহা বেচারির সর্দি লেগে যাবে। পেখম ওকে সরাতে যাবে, এমন সময় মায়ের তোয়ালে খরখরে গলায় বলল, 'ন্যাকা। ঐটুকু মোজা, সে আবার শুকোবে না! হতিস আমার মত ভারী চেহারার তবে বুঝতাম! পেখমের মা যে কোন আক্কেলে, এই বাদুলে দিনে আমায় ভেজাল, তিনিই জানেন।' 
রুমাল চেঁচিয়ে উঠল, 'আবার? বারণ করলাম না।'
এমন সময়, পেখমের দুটো ফ্রক ফিতে ধরাধরি করে চেঁচিয়ে গেয়ে উঠল, “আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই।” ঠাকুমার শাড়ি রঙ লাগার দুঃখ ভুলে ধমক দিল, 'তোরা আবার ভাই কিসের? পেখম তো মেয়ে। তাই তোরাও মেয়ে। অন্য গান কর।' বলেই গুনগুন করে গাইতে শুরু করে দিল, ‘গহন মেঘের ছায়া ঘনায়ে সে আসে’। পিসিমণির ওড়না বলল, 'ওফ কী বেসুরো।' 

এমন সময় সত্যি সত্যি মেঘ করে এল। ছাদ জুড়ে জামাকাপড়ের হইচই ঝগড়া আরো বেড়ে গেল। কেউই খুশি নয় নিজের অবস্থানে। দমকা হাওয়া পেখমকে বলল, 'একটু বাদেই তো বৃষ্টি হবে। দাও না বাপু, যে যেখানে চাইছে, সেখানে জায়গা বদল করে দাও। ছাদের  কোণে রাখা বালতিটা লাফাতে লাগল। পেখম ওর কাছে ছুটে যেতেই বলল, ওদের কথায় কান দিও না তো। আমার মধ্যে যখন থাকে, তখন তো এত বায়নাক্কা দেখি না। সবাই গাদাগাদি করেই থাকে। আসলে তোমায় বোকা পেয়েছে তো তাই।' পেখম চুপচাপ ‘বোকা’ শব্দটা হজম করল। কী করবে? একটা বালতির সাথে ঝগড়া করা যায় না কি? পিসিমণির রুমাল চেঁচাচ্ছে, 'এই পেখম,  তোমার এমন সুন্দর নাম, বৃষ্টি এলে নাচতে হবে কিন্তু।' বলতে বলতেই ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল।   
পেখমের সম্বিৎ ফিরল, পিসিমণির ডাকে। পিসিমণি কখন ছাদের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। পিসিমণি বলল, 'পেখম ভিজিস না। নীচে যা। আমি জামাকাপড়গুলো তুলছি।' পেখম নীচেই যাচ্ছিল। যেতে যেতে দেখল, ছাদের কোণার টবের বেলফুলের গাছটা ডাল ঝাঁকিয়ে বলছে, 'যাক বাঁচা গেল। এদের চিৎকারে এতক্ষণ অতিষ্ঠ লাগছিল। শব্দদূষণ গাছেরা মোটেই পছন্দ করে না।'
পেখম ভাবছিল, কী আশ্চর্য একটা দিন। পিসিমনি নিশ্চয়ই কিছু শুনতে পায় নি। ভাগ্যিস! সবকিছু সবার জন্য নয়। ও ঐ জামাকাপড়গুলো নিয়ে রাতে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখল। পরদিন সকালে উঠে, লিখে ফেলল রচনাটা। আরো অনেক রঙিন ভাবনার মিশেলে। পেখম অবশ্য জানে না, রাতে পিসিমণি মাকে বলছিল, 'তোমার মেয়েটা এক্কেবারে পাগলি। ছাদে গিয়ে দেখি ও জামাকাপড়গুলো টানাটানি করে খেলছে, আর কী সব বলছে, আমার গায়ে রঙ লাগালি কেন...জায়গা বদল করে দাও...শব্দদূষণ... আরো কত কী!
স্মিতাম্যাম সব খাতা স্কুলে বসে দেখতে পারেন নি। কিছু বাড়িতেও এনেছেন। পেখমের খাতা দেখে ভুরু কুঁচকে গেল, এ আবার  কী  হাবিজাবি লিখেছে! তবে পড়তে পড়তে বেশ মজা লাগতে লাগল। নাহ, মেয়েটার কল্পনাশক্তি আছে তো! নম্বরের গন্ডিতে সব লেখা বাঁধা যায় না। কাল স্কুলে সবাইকে পড়ে শোনাবেন লেখাটা।  
এইসব ভাবতে ভাবতে বারান্দায় চোখ পড়তেই দেখলেন, ওখানে মেলা ওনার নতুন কুর্তিটা হাত নেড়ে ডাকছে। আর বলছে, 'কি ম্যাম খাতা দেখা হল? আমি এখানে বড্ড বোর হচ্ছি। শুকিয়েও গেছি। প্লিজ,আমায় তুলে আলনায় সবার সাথে রেখে দাও।'
ফিক করে হেসে ফেললেন স্মিতাম্যাম।

তনুশ্রী দাস


Popular Books


Comments

  • Achintya Ghosal

    অসাধারণ লাগলো

    Jul 24 2023
  • সঞ্জীব কুমার দে।

    অসাধারণ গল্প। অসাধারণ! ছোটরা তো বটেই, এই বয়সে আমিও কী কম মজা পেলাম!

    Sep 7 2023
  • XnQELrhdvuYUBJV

    EkjFIzyhGgqS

    Jan 29 2024
  • XnQELrhdvuYUBJV

    EkjFIzyhGgqS

    Jan 29 2024
  • XnQELrhdvuYUBJV

    EkjFIzyhGgqS

    Jan 29 2024
  • JnqHKVmdeBQagi

    jqZCrQfbc

    Mar 14 2024
  • JnqHKVmdeBQagi

    jqZCrQfbc

    Mar 14 2024
  • JnqHKVmdeBQagi

    jqZCrQfbc

    Mar 14 2024

Write a Comment